
facebook, বর্তমান বিশ্বের অন্যতম জনপ্রিয় সামাজিক মাধ্যম প্ল্যাটফর্ম, একসময় একটি সাধারণ কলেজ প্রোজেক্ট হিসেবে শুরু হয়েছিল।
বর্তমানে এটি একটি বৈশ্বিক প্রতিষ্ঠান, যার ব্যবহারকারীর সংখ্যা প্রায় ২.৯ বিলিয়ন, এবং এটি মানুষের জীবনকে একেবারে বদলে দিয়েছে। ফেসবুকের যাত্রা এবং এর বৃদ্ধি সম্পর্কে জানালে একটি বিস্ময়কর প্রযুক্তিগত অগ্রগতি এবং ব্যবসায়িক সাফল্যের গল্প উন্মোচিত হয়।
নিত্য নতুন ইনকামের নিউজ পেতে আমাদের হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে জয়েন হতে পারেন Link |
ফেসবুকের জন্ম:
ফেসবুকের জন্ম ২০০৪ সালে, মার্ক জুকারবার্গ এবং তার সহকর্মী এডুয়ার্ডো সাভেরিন, অ্যান্ড্রু ম্যাককোলাম, এবং ডাস্টিন মস্কোভিটজের হাতে। এটি প্রথমে “ফেসম্যাশ” নামক একটি ওয়েবসাইট হিসেবে তৈরি হয়েছিল হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের দুটি ছাত্রের মধ্যে। ফেসম্যাশ ব্যবহারকারীদের ছবি তুলতে এবং তাদের মধ্যে তুলনা করতে উত্সাহিত করত। তবে এই ওয়েবসাইটটি খুব দ্রুত বন্ধ করে দেওয়া হয়, কারণ এটি বিশ্ববিদ্যালয়ের নীতি বিরোধী ছিল এবং ব্যক্তিগত গোপনীয়তার লঙ্ঘন করছিল।
এরপর, ২০০৪ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি মার্ক জুকারবার্গ এবং তার টিম নতুন নামকরণ করা ওয়েবসাইট “দ্য ফেসবুক” চালু করেন। এটি প্রথমে শুধুমাত্র হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জন্য ছিল, তবে পরে এটি অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয় এবং কলেজেও ছড়িয়ে পড়ে। কিছুদিন পরেই, facebook সাধারণ জনগণের জন্য উন্মুক্ত হয়ে যায়।
ফেসবুকের অগ্রগতি এবং সাফল্য:
ফেসবুকের প্রথম সাফল্যটি আসে যখন এটি ২০০৪ সালের শেষ দিকে সিলিকন ভ্যালি থেকে বিনিয়োগ পেতে শুরু করে। ২০০৫ সালে, ফেসবুক তার নাম থেকে “দ্য” সরিয়ে শুধু “facebook” রাখে এবং তখন থেকেই এটি সারা বিশ্বে জনপ্রিয় হতে শুরু করে। ২০০৬ সালে, ফেসবুক ১৩ বছর বা তার বেশি বয়সী যে কোনও ব্যক্তি ব্যবহার করতে পারতেন, এবং একই বছরের মধ্যে এটি ১০ মিলিয়ন ব্যবহারকারী ছুঁয়ে ফেলে।
facebook র বড় পরিবর্তন:
এটি তার উন্নত প্রযুক্তি এবং বৈশ্বিক সম্প্রসারণের মাধ্যমে একাধিক বৈশ্বিক সংস্থা ও শিল্পের ক্ষেত্রে বিপ্লব সৃষ্টি করেছে। প্রথমদিকে, এটি একটি সামাজিক যোগাযোগের প্ল্যাটফর্ম হিসেবেই পরিচিত ছিল, যেখানে ব্যবহারকারীরা নিজেদের ছবি, স্ট্যাটাস, এবং বন্ধুবান্ধবদের সঙ্গে যোগাযোগ করতেন। তবে সময়ের সাথে সাথে ফেসবুক আরও অনেক ফিচার যোগ করেছে যা এটি একটি পূর্ণাঙ্গ ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে পরিণত করেছে। এর মধ্যে অন্যতম হলো:
- নিউস ফিড: ২০০৬ সালে নিউস ফিড নামক ফিচার চালু হয়, যার মাধ্যমে ব্যবহারকারীরা বন্ধুদের পোস্ট এবং আপডেট দেখতে পারেন। এটি একটি বিপ্লবী ধারণা ছিল, কারণ ব্যবহারকারীরা পোস্ট দেখার জন্য পেজে না গিয়ে সরাসরি তাদের নিউজ ফিডে দেখতে পেতেন।
- পেজ এবং গ্রুপ: ২০০৭ সালের মধ্যে, ফেসবুক ব্যবসায়িক পেজ, গ্রুপ, এবং ব্র্যান্ডের জন্য একটি শক্তিশালী প্ল্যাটফর্ম হয়ে ওঠে। এতে ব্র্যান্ড এবং পণ্য প্রচারের সুযোগ সৃষ্টি হয় এবং ব্যবসায়ীরা তাদের লক্ষ্যমাত্রা গ্রাহকদের কাছে পৌঁছানোর জন্য ফেসবুককে ব্যবহার করতে শুরু করেন।
- ফেসবুক অ্যাডস: ২০০৭ সালের মধ্যে ফেসবুক তার বিজ্ঞাপন সেবা শুরু করে, যা ব্যবসায়ীদেরকে তাদের পণ্য বা সেবা বিশেষ লক্ষ্যভিত্তিক গ্রাহকদের কাছে পৌঁছানোর সুযোগ দেয়। এর মাধ্যমে ব্যবসাগুলি বিজ্ঞাপন দিয়ে তাদের ব্র্যান্ডের দৃশ্যমানতা বৃদ্ধি করতে সক্ষম হয়।
- ফেসবুক লাইভ: ২০১৬ সালে facebook লাইভ ভিডিও ফিচার চালু হলে এটি ব্যবহারকারীদের সরাসরি ভিডিও সম্প্রচার করার সুযোগ দেয়। এর মাধ্যমে সংবাদ, ইভেন্ট, কনসার্ট এবং ব্যক্তিগত অনুষ্ঠানগুলো লাইভ দেখানো সম্ভব হয়।
ফেসবুকের অধিগ্রহণ:
ফেসবুক তার যাত্রার পথে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান অধিগ্রহণ করেছে, যা তার ব্যবসায়িক মডেলকে আরও শক্তিশালী করেছে। ২০১২ সালে ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম অধিগ্রহণ করে, যা একটি ছবি এবং ভিডিও শেয়ারিং অ্যাপ্লিকেশন হিসেবে দ্রুত জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। ২০১৪ সালে ফেসবুক, ওয়াটসঅ্যাপও অধিগ্রহণ করে, যা পরবর্তীতে বিশ্বের অন্যতম জনপ্রিয় মেসেজিং প্ল্যাটফর্ম হয়ে ওঠে।
এছাড়াও, ২০১৪ সালে facebook Oculus VR নামক ভার্চুয়াল রিয়ালিটি কোম্পানিটি অধিগ্রহণ করে, যা ভবিষ্যতের প্রযুক্তি বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
ফেসবুকের বর্তমান পরিস্থিতি:
আজকের দিনেও, ফেসবুক পৃথিবীর সবচেয়ে বড় সামাজিক মাধ্যম হিসেবে পরিচিত। এর প্ল্যাটফর্মটি বিভিন্ন ফিচার যেমন ফেসবুক মার্কেটপ্লেস, ভিডিও কল, গেমিং, নিউজ আউটলেট, এবং আরও অনেক কিছু অন্তর্ভুক্ত করে। বিশ্বজুড়ে এটি সংবাদ, বিনোদন, রাজনীতি, ব্যবসা এবং অন্যান্য অনেক ক্ষেত্রের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ প্ল্যাটফর্ম হয়ে উঠেছে।
তবে facebook বিভিন্ন ধরণের বিতর্কের সম্মুখীন হয়েছে, যেমন ব্যবহারকারীদের গোপনীয়তা লঙ্ঘন, মিথ্যা তথ্য এবং গুজব ছড়ানো, এবং রাজনৈতিক প্রভাব সৃষ্টি করার অভিযোগ। এর মধ্যে ২০১৮ সালের ক্যামব্রিজ অ্যানালিটিকা কেলেঙ্কারি অন্যতম, যেখানে ব্যক্তিগত তথ্যের অপব্যবহার এবং রাজনৈতিক প্রচারের জন্য ফেসবুককে দায়ী করা হয়েছিল।
আরো পড়ুন
- Fiverr-এ কিভাবে গিগ তৈরি করে Income বাড়ানো যায়?
- মার্কেটপ্লেসে কম্পিটিশন বেশি হলে Income বাড়ানোর কৌশল
- স্মার্টফোন ব্যবহার করে ছবি বিক্রির মাধ্যমে কিভাবে আয় করবেন।
- Upwork থেকে ইনকাম Income করার ১০টি কার্যকরী টিপস
- Freelancer.com থেকে কিভাবে বেশি Income করা সম্ভব?
উপসংহার:
ফেসবুকের ইতিহাস একটি প্রযুক্তিগত, সামাজিক এবং ব্যবসায়িক বিপ্লবের গল্প। এটি যেভাবে মানুষকে একে অপরের সঙ্গে সংযুক্ত করেছে এবং পৃথিবীকে একটি গ্লোবাল ভিলেজে পরিণত করেছে, তাতে ফেসবুকের গুরুত্ব অনস্বীকার্য। যদিও এটি বিভিন্ন ধরনের চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি, তবুও facebook তার নিজস্ব নতুন নতুন উদ্ভাবন এবং পরিবর্তন মাধ্যমে আরও উন্নত এবং শক্তিশালী হতে থাকবে।