রমজান Ramadan মাস মুসলিম উম্মাহর জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি মাস। এই মাসে সারা পৃথিবীজুড়ে মুসলিমরা রোজা রাখেন, যা মানে হলো সূর্যোদয় থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত পানাহার থেকে বিরত থাকা।
সেহরি ও ইফতার হল দুটি গুরুত্বপূর্ণ খাবারের সময়, যা রোজা রাখার সঙ্গে সম্পর্কিত। ইসলামের দৃষ্টিতে, সেহরি ও ইফতার শুধু খাবারের সময় নয়, বরং এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ ধর্মীয় আচরণ, যার মধ্যে রয়েছে নিয়ম, আচার, এবং বিশেষ কিছু আদব।
নিত্য নতুন ইনকামের নিউজ পেতে আমাদের হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে জয়েন হতে পারেন Link |
ইসলামে সেহরি ও ইফতার দুটি একে অপরের পরিপূরক এবং অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সেহরি ও ইফতার করার মাধ্যমে রোজাদারের শরীরের শক্তি বজায় থাকে এবং তারা নিজেদের রোজা পূর্ণ করার ক্ষমতা অর্জন করে। একদিকে, সেহরি শরীরের শক্তি যোগাতে সাহায্য করে, অন্যদিকে, ইফতার রোজাদারের তৃপ্তি ও পূর্ণতার অনুভূতি সৃষ্টি করে।
২. সেহরি করার আদব
সেহরি করার সময় কিছু বিশেষ আদব পালন করা উচিত। এটি রোজার এক গুরুত্বপূর্ণ অংশ, এবং এটি সঠিকভাবে পালন করলে ব্যক্তি সঠিকভাবে রোজা রাখতে সক্ষম হবে।
- প্রথমে সেহরি দেরিতে করা: রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, “আমরা মুসলিমদের মধ্যে সেহরি করার সময়টি হল দেরি করা।” (বুখারি) তাই সেহরি একটু দেরিতে করা উচিত, তবে সূর্যোদয়ের আগে শেষ করতে হবে।
- পানি ও ফলমূল খাওয়া: সেহরিতে শুধু তেল-মশলা বা ভারী খাবার খাওয়ার প্রতি উৎসাহিত করা হয় না। বরং হালকা খাবারের সঙ্গে প্রচুর পানি ও ফলমূল খাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়। কারণ এটি শরীরকে সারা দিনের জন্য প্রয়োজনীয় পুষ্টি এবং জল সরবরাহ নিশ্চিত করে।
- নিয়মিত দোয়া ও কুরআন তিলাওয়াত: সেহরি খাওয়ার পর কিছু সময় দোয়া পড়া বা কুরআন তিলাওয়াত করা উচিত। এর মাধ্যমে আত্মিক শান্তি এবং আল্লাহর কাছ থেকে সহায়তা পাওয়া যায়।
- ধৈর্য ধরার মনোভাব: সেহরি খাওয়ার সময় যদি মনোভাব শান্ত থাকে এবং আল্লাহর উপর পূর্ণ ভরসা থাকে, তাহলে তা রোজার মানকে আরো ভালোভাবে উপলব্ধি করতে সাহায্য করে।
৩. Ramadan ইফতার করার আদব
ইফতার, যা সূর্যাস্তের পর প্রথম খাবার গ্রহণের সময়, ইসলামে এক অত্যন্ত সম্মানিত সময়। ইফতারের সময়ও কিছু আদব পালন করা আবশ্যক।
- প্রথমে খেজুর বা পানি দিয়ে ইফতার করা: রাসূলুল্লাহ (সা.) এর উদাহরণ অনুসরণ করে, প্রথমে খেজুর অথবা পানি দিয়ে ইফতার করা সুন্নত। যদি খেজুর না পাওয়া যায়, তবে পানি দিয়ে ইফতার করা উত্তম। (আবু দাউদ)
- ধীরগতিতে খাবার খাওয়া: ইফতার করার সময় খাবার খাওয়ার মধ্যে ধৈর্য ধরতে হবে এবং অত্যাধিক খাবারের প্রতি মনোযোগ না দিয়ে খাবার ভেবে ধীরে ধীরে খেতে হবে।
- দোয়া ও ইস্তেগফার: ইফতার করার আগে আল্লাহর কাছে দোয়া করা এবং তার থেকে ক্ষমা চাওয়া উচিত। রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, “যে ব্যক্তি রোজা রেখে ইফতার করে, তার জন্য দোয়া মঞ্জুর হয়।” (তিরমিজি)
- ঈদ উত্সবের প্রস্তুতি: ইফতার করার পর, ঈদের দিনের জন্য প্রস্তুতি নেওয়ার বিষয়টিও গুরুত্বপূর্ণ। ঈদের দিনটিকে পূর্ণ আনন্দের দিন হিসেবে পালন করার জন্য ইফতার সময় থেকে শুদ্ধ কাজের দিকে মনোনিবেশ করা উচিত।
৪. সেহরি ও ইফতার করার আরও কিছু গুরুত্বপূর্ণ দিক Ramadan
- স্বাস্থ্যসেবা: সেহরি ও ইফতার স্বাস্থ্য সম্পর্কিত দিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ। সেহরি ও ইফতার স্বাস্থ্যকর খাবারের সাথে নেওয়া উচিত, যাতে শরীর তাজা থাকে এবং শক্তি বজায় থাকে। সেহরিতে এমন খাবার খাওয়া উচিত যা দীর্ঘস্থায়ী শক্তি প্রদান করে, যেমন প্রোটিন ও ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার।
- পারিবারিক সম্পর্ক উন্নয়ন: সেহরি ও ইফতারের সময়টি পারিবারিক বন্ধনকে আরও শক্তিশালী করে তোলে। পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে এই সময় কাটানো ইসলামের একটি গুরুত্বপূর্ণ আদব।
- আধ্যাত্মিক উন্নতি: সেহরি ও ইফতার করার সময় আল্লাহর নিকট দোয়া ও তওবা করার মাধ্যমে আধ্যাত্মিক উন্নতি লাভ করা সম্ভব। রোজা রাখার মাধ্যমে আত্মসংযম ও ধৈর্য অর্জন করা হয়, যা মুসলমানদের নৈতিক উন্নতি করে।
৫. সেহরি ও ইফতার সম্পর্কিত কিছু হাদিস
- রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, “আমরা মুসলিমরা সেহরি খাওয়ার মাধ্যমে আল্লাহর অনুগ্রহ লাভ করি এবং এটাই আমাদের অন্যান্য উম্মতের থেকে আলাদা করে।” (বুখারি)
- “যে ব্যক্তি রোজা রেখে ইফতার করে, তার রোজা পূর্ণ হয়ে যায় এবং তার জন্য আল্লাহর রহমত বর্ষিত হয়।” (তিরমিজি)
৬. উপসংহার Ramadan
সেহরি ও ইফতার ইসলামের গুরুত্বপূর্ণ অভ্যাস এবং মুসলিমদের রোজা পালন করতে সহায়ক। এটি শুধু শারীরিক ক্ষুধা মেটানো নয়, বরং এক আত্মিক পরিশুদ্ধি এবং আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করার মাধ্যম। সেহরি ও ইফতার সঠিক নিয়ম এবং আদব অনুযায়ী পালন করা উচিত, যাতে রোজা পূর্ণ এবং সঠিকভাবে পালন করা যায়।